শিক্ষা

জাকসু নির্বাচন বানচালের চেষ্টা বলছে শিবির-রাতেই ফল ঘোষনা বলছেন সিইসি

 নির্বাচন বানচালে বিএনপিপন্থী দুই শিক্ষক ইন্ধন দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন ছাত্রশিবির–সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম; এদিকে শুক্রবার রাতের মধ্যেই জাকসু ও ২১ টি হল সংসদের ভোট গণনা শেষে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান।

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : জাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রশিবির–সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী মাজহারুল ইসলাম। নির্বাচন বানচালে বিএনপিপন্থী দুই শিক্ষক ইন্ধন দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। শুক্রবার বিকেলে জাকসু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলনে মাজহারুল ইসলাম এ অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্যানেলের অন্য প্রার্থীরাও উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শুক্রবার রাতের মধ্যেই জাকসু ও ২১ টি হল সংসদের ভোট গণনা শেষে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল বিকেল পাঁচটায় ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। ভোট গ্রহণের এক দিন পার হলেও ভোট গণনা শেষ হয়নি। এক দিন পরও মাত্র শুধু হল সংসদের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। জাকসু নির্বাচনের ভোট গণনা এখনো শুরুই হয়নি।’ তিনি বলেন, ‘এখানে সুস্পষ্টভাবে আমরা ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাচ্ছি। আমরা ভোটের আগের দিন থেকে প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে বলে আসছিলাম যে কোন জায়গাগুলোতে লুপ হোল রয়েছে, কোন জায়গাগুলোতে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, সেগুলোর স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেন। আমরা একটি ফেয়ার নির্বাচন চাই, শিক্ষার্থীরা যাঁকে ইচ্ছা তাঁকে ভোট দেবেন, কিন্তু আপনারা ফেয়ার নির্বাচন করেন।’

এই জিএস প্রার্থী বলেন, ‘গতকাল নির্বাচনে নানা ধরনের অব্যবস্থাপনা ছিল। পোলিং এজেন্ট, অতিরিক্ত ব্যালট পেপার, নির্ধারিত সময়ে ভোট গ্রহণ শুরু না হওয়া—এ সবকিছুতে অব্যবস্থাপনা আমরা দেখেছি। কিন্তু সেগুলো ছাপিয়ে গেছে ছাত্রদলের আগ্রাসী কার্যক্রম; বাগছাসের ক্রমাগত ব্যাশিং ও মিথ্যাচার। গতকাল কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসভাপতি (সাবেক শিক্ষার্থী) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল থেকে আটক হয়েছিলেন অবৈধভাবে হলে অবস্থান এবং নির্বাচন বানচালের প্রয়াসের জন্য। ছাত্রীদের ১৫ নম্বর হলে সামান্য তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে হলে মব তৈরি, ফ্রেমিং তৈরি করে শিবিরের ওপর দায় চাপিয়ে দিয়েছে এবং মব তৈরি করে হট্টগোল করেছে, নির্বাচনী কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। ২১ নম্বর হল ও তাজউদ্দীন আহমদ হলে জোর করে কেন্দ্র দখলের চেষ্টা করেছে।’

জামায়াতপন্থী প্রতিষ্ঠান থেকে ওএমআর নেওয়ার দাবি মিথ্যা উল্লেখ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ওএমআর যে প্রতিষ্ঠান থেকে আনা হয়েছে সেটিকে জামায়াত ট্যাগ দিয়ে বাতিলের চেষ্টা করেছে ছাত্রদল ও বাগছাস। জামায়াতপন্থী যদি কোনো কিছু থাকে, আপনারা দেখতে চাইবেন সে যন্ত্রটি ঠিক আছে কি না; সেটা আপনাদের কনসার্ন থাকা উচিত ছিল, কিন্তু আপনারা কনসার্ন জানিয়েছেন সেটি জামায়াতপন্থী কি না। পরবর্তী সময়ে আমরা দেখতে পেয়েছি, সেটি জামায়াতপন্থী নয় বরং বিএনপিপন্থী ছিলেন।’

ওএমআরে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত বাতিলের প্রসঙ্গ টেনে শিবিরের ওই নেতা বলেন, ‘তার গ্লানি এখনো আমাদের টানতে হচ্ছে। এখন পর্যন্ত যাঁরা ভোট গণনা করছেন তাঁদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বাস্তবিকভাবে কোনোভাবেই আজকের মধ্যে ভোট গণনা করা সম্ভব নয়। ওএমআরের মতো ঠুনকো অজুহাতে ছাত্রদল নির্বাচন বানচাল করতে চায়।’

নির্বাচন বানচালে বিএনপিপন্থী দুই শিক্ষক ইন্ধন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘নির্বাচন বানচালের ইন্ধন দিচ্ছেন বিএনপিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক নজরুল ইসলাম ও অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার (নির্বাচন কমিশনের সদস্য)। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম একটি হলের প্রাধ্যক্ষ হয়েও অন্য একটি ছাত্রী হলে ঢুকে মব সৃষ্টি করেন, যার ফলে নির্বাচন কিছুক্ষণ স্থগিত হয়।

ছাত্রদলকে ব্যবহার করে তিনি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। হলের বাইরে অনেক প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে দেখা গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আজকে সকালে একজন শিক্ষিকা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করতে এসে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, যিনি গতকাল দায়িত্ব পালন করেননি। কিন্তু নজরুল ইসলামের গ্রুপ সেটাকে কেন্দ্র করে অস্থিতিশীলতা তৈরি করার চেষ্টা করছে।’

শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অফিস ও প্রচার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘এই ক্যাম্পাস কোনো স্যারের গ্রুপের নয়, কোনো দলের নয়। শিক্ষার্থীরা ৩৩ বছর পর হওয়া জাকসু চায়। আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি, আমরা একটি ফেয়ার (নিরপেক্ষ) নির্বাচন চাই। আমরা নির্বাচিত হই বা না হই, আমাদের কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু শিক্ষার্থীরা যেন তাঁদের প্রতিনিধি বাছাই করে নিতে পারেন।

যাঁরা শিক্ষার্থীদের ম্যান্ডেট চায় না, তারা নির্বাচন বানচাল করতে চায়। আজকের মধ্যে ভোট গণনা শেষ করে যদি ফলাফল ঘোষণা না করা হয়, তাহলে আমরা দৃঢ় অবস্থান নেব। নির্বাচন বানচাল করার অপপ্রয়াস কোনোভাবেই সফল হতে দেওয়া হবে না। কেউ নির্বাচন বানচাল করতে চাইলে তা প্রতিহত করা হবে।’

শুক্রবার রাতের মধ্যেই ফল ঘোষণা করা হবে-

এদিকে শুক্রবার রাতের মধ্যেই জাকসু ও ২১ টি হল সংসদের ভোট গণনা শেষে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মো. মনিরুজ্জামান। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, রাতের মধ্যেই ভোট গণনা শেষ করে ফলাফল ঘোষণা করা হবে। তবে সেটার নির্দিষ্ট সময় নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। রাতের শেষভাগেও (ফল ঘোষণা) করা হতে পারে।

মনিরুজ্জামান বলেন, গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাত নয়টা থেকেই ভোট গণনা শুরু করা হয়েছে। ২১ টি হলের মধ্যে ১৯ টি হলের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘জাকসু নির্বাচনের ভোট গণনা চলছে। আমরা দ্রুত ভোট গণনার জন্য জনবল বৃদ্ধি করেছি। প্রার্থীদের এজেন্টের সামনে স্বচ্ছতা বজায় রেখে ভোট গণনা করা হচ্ছে।’ তিনি জানান, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেই এমন কাউকে ভোট গণনায় রাখা হয়নি।

ফল স্থগিত করার চেষ্টা: ভিপি প্রার্থী জিতু-

জাকসু নির্বাচনের ফল স্থগিত করা হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক কেন্দ্রীয় এই সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা শুনতে পাচ্ছি একটি স্বার্থান্বেষী মহল নির্বাচনের ফল স্থগিতের চেষ্টা চালাচ্ছে। এমন কোনো কিছু করার চেষ্টা করা হলে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে প্রতিহত করব।’

আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের কাছে আমাদের দাবি ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে যেন ভোট গণনা শেষ করে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। এই ভিপি প্রার্থী বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করা হলে আমরা সেটা মেনে নেব না। প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়সূচি পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। আর ফলাফলে যে রায় আসবে তা আমরা মেনে নেব।’

কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের ভোট গণনা শুরু-

এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদের ভোট গণনা শুরু হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে এই গণনা শুরু হয়। প্রথম ধাপে নয়টি হলের ভোট গণনা হচ্ছে। হলগুলো হচ্ছে: বেগম সুফিয়া কামাল হল, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল, মীর মশাররফ হোসেন হল, শহীদ সালাম-বরকত হল, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল, খালেদা জিয়া হল, শহীদ রফিক-জব্বার হল, তারামন বিবি হল ও জাহানারা ইমাম হল।জাকসু নির্বাচন কমিশনার রেজোয়ানা করিম স্নিগ্ধা এ তথ্য জানান।

জাকসু নির্বাচন কমিশনের অব্যবস্থাপনার জন্য শিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসের মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে এর সঠিক বিচার দাবি করেছেন অধ্যাপক সুলতানা আক্তার। তিনি জাকসু নির্বাচনে নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল কেন্দ্রের রিটার্নিং কর্মকর্তা। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলাভবনের সামনে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক সুলতানা আক্তার।

সুলতানা আক্তার বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এই অব্যবস্থাপনার জন্য দায় নিতে হবে। একইসাথে জান্নাতুল ফেরদৌসের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।এই অধ্যাপক বলেন, ‘হল সংসদে একটিমাত্র ব্যলট পেপারের মাধ্যমে ভোট হচ্ছে, কিন্তু জাকসুতে ৩টা করে, অর্থাৎ যদি ৮ হাজার ভোট কাস্ট (প্রদত্ত ভোট) হয়ে থাকে, তবে ২৪ হাজার কাউন্ট (গণনা) করতে হবে ম্যানুয়াল (হাতে গোণা) পদ্ধতিতে। তাহলে এটা কীভাবে সম্ভব, তিন দিনেও তো এটা সম্ভব হবে না। এই পদ্ধতির আমরা পরিবর্তন চাই।’

 

সংশ্লিষ্ট খবর

Back to top button