বিবেক সততা নীতি বিসর্জন নয়- এনসিপি রাজশাহীর যুগ্ম সমন্বয়ক শামীমা সুলতানা মায়ার পদত্যাগ

পদত্যাগের ঘোষণায় তিনি বলেন, ‘মিথ্যা অভিযোগ, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা ও নানামুখী কর্মকাণ্ডের কারণে আমি উপলব্ধি করেছি, এই পদে থেকে আমার নীতিগত অবস্থান অটুট রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না। যেসব ঘটনা ঘটছে এবং যেভাবে সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আমার ব্যক্তিগত আদর্শ ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছে।’
রাজশাহী প্রতিনিধি : বিবেক সততা নীতি বিসর্জন দিতে চাই না বলে পদত্যাগ করলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) রাজশাহী জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক শামীমা সুলতানা ওরফে মায়া। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
কেন্দ্রীয় কমিটিতে লিখিত অভিযোগ করে কোনো ‘প্রতিকার না পেয়ে’ পদত্যাগ করেছেন বলে জানান, রাজশাহী জেলা সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়ক শামীমা সুলতানা ওরফে মায়া। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে জলিল বিশ্বাস মার্কেটের সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এই পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
এ সময় দলীয় প্রধানের কাছে পাঠানো একটি চিঠি পড়ে শোনান শামীমা সুলতানা। গত আগস্টে তিনি বেশ কিছু বিষয় তুলে ধরে দলীয় প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। তবে তার কোনো প্রতিকার পাননি বলে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, ‘আমি কাউকে আঘাত করতে চাই না কিংবা কোনো সরাসরি অভিযোগ তুলতে চাই না। তবে সত্য হলো আমি আমার বিবেক, সততা এবং নীতিকে কোনোভাবেই বিসর্জন দিতে চাই না।’
শামীমা সুলতানা রাজশাহীর একজন নারী উদ্যোক্তা। তিনি এনসিপিতে পদ পাওয়ার পর তাঁর কিছু ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পর্ষদের শপথ গ্রহণের দিন এসব ছবি তৎকালীন সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান ও তাঁর স্ত্রী শাহীন আক্তারের সঙ্গে তোলা হয়েছিল। ফেসবুকের বিভিন্ন আইডি থেকে এসব ছবি পোস্ট করে তাঁকে ‘আওয়ামী দোসর’ বলা হয়।
শামীমা সুলতানা বলেন, ‘আমি আগে কখনো কোনো দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। কিন্তু আমার নামে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে, নোংরা মন্তব্য করা হয়েছে, সেখানে আমি নির্দোষ হওয়া সত্ত্বেও দলীয়ভাবে কোনো সমর্থন ও সহযোগিতা পাইনি। আমি সামাজিক ও ব্যবসায়িক সব ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।’
শামীমা অভিযোগ করেন, এনসিপির জেলা ও উপজেলা নিয়ন্ত্রণ করছে মহানগর কমিটি। দলীয় প্রধানকে পাঠানো চিঠিতে তিনি লেখেন, ‘জেলার সব উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সব কাজ মহানগর কমিটি সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করছে এবং যারা জেলা কমিটিতে আছি, স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছি না। প্রশাসনিকভাবে কোনো সাহায্য–সহযোগিতা পাচ্ছি না। রাজশাহীতে এক পক্ষ এনসিপিকে পক্ষভূত করার অপচেষ্টা করছে এবং সব ক্ষেত্রে আমাদের কাজ করতে বাধা দিচ্ছে, ব্যক্তিগতভাবে অপমান–অপদস্থ করছে।’
এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন শামীমা। এক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন। পদত্যাগের ঘোষণায় তিনি বলেন, ‘মিথ্যা অভিযোগ, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা ও নানামুখী কর্মকাণ্ডের কারণে আমি উপলব্ধি করেছি, এই পদে থেকে আমার নীতিগত অবস্থান অটুট রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না। যেসব ঘটনা ঘটছে এবং যেভাবে সামাজিক পরিবেশ ও পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা আমার ব্যক্তিগত আদর্শ ও নৈতিকতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে উঠেছে।’
গত ১৮ জুন এনসিপির জেলা ও মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২৫ জুন অভিযোগ ওঠে যে জেলা কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী ফিরোজ আলমকে লাথি মেরে হাসপাতালে পাঠিয়েছেন। পরদিন জেলা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম পদত্যাগ করেন। এদিকে ফিরোজ আলমকে লাথি মারার ঘটনায় নাহিদুলকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হলেও পরে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
শামীমা সুলতানার পদত্যাগের বিষয়ে কথা বলতে নাহিদুল ইসলামকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। মহানগর কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের আলী জেলা কমিটিকে নিয়ন্ত্রণ করার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘জেলা কমিটির মায়া, ফিরোজ আলম ও সাইফুল ইসলাম নামের তিনজনের বিরুদ্ধে আওয়ামীসম্পৃক্ততার অভিযোগ আছে। তাই দুই দিন আগে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এদের দল থেকে না সরালে জেলা ও মহানগরের অন্য সবাই আমরা একযোগে পদত্যাগ করব। তাঁদের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে অভিযোগ করা হবে। অভিযোগ লেখা হচ্ছে। এটি জানতে পেরে মায়া আগাম পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন।’