ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জাতির নবজন্ম হবে: ড.ইউনূস

‘আমরা হাইওয়ে বানিয়ে ফেলেছি, এখন শুধু সাইনবোর্ড বসানো বাকি। পথ ঠিক আছে, গন্তব্য পরিষ্কার। এই নির্বাচন হবে উৎসবের নির্বাচন, দেশের শান্তি ও নতুন যাত্রার সূচনা।তিনি আরও যোগ করেন, আমাদের সংস্কারের মূল লক্ষ্য হলো সব পথঘাট বন্ধ করা—যাতে কোনো স্বৈরাচার আর ফিরে আসতে না পারে।’
বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে মহোৎসবের। আর এই নির্বাচনের মাধ্যমে জাতির নবজন্ম হবে। জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণে আজ রোববার রাজধানীর বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে তিনি এ কথা বলেন। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যের পথে যে অগ্রগতি অর্জন করেছে, তা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা বিশ্বের জন্যই এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি স্পষ্ট করে জানান, আগামী ফেব্রুয়ারিতেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং সেটি হবে ‘জাতির নবজন্মের মহোৎসব।’
তিনি বলেন, ‘শুরুতে যখন কমিশনের ধারণা এল, আমি নিশ্চিত ছিলাম না—এটা টিকবে কি না। কিন্তু আজ দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পরে আপনাদের আলোচনা ও সিদ্ধান্তে আমি অভিভূত হয়েছি।’তিনি আরও বলেন, কমিশনের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে অন্য দেশগুলোও অনুসরণ করবে। ‘এটা শুধু বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে না, সারা দুনিয়া লক্ষ্য করবে আমরা কিভাবে সমস্যার সমাধান করলাম।’
প্রধান উপদেষ্টা জোর দিয়ে বলেন, জাতির সামনে আর কোনো বিকল্প পথ নেই। ‘যে পথে আমরা শুরু করেছি, সেই পথ থেকে বের হবার কোনো সুযোগ নেই। এই সমতায় আমাদের আসতেই হবে। এটাই ছাত্র-জনতার দেওয়া সুযোগ, যেখান থেকে নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে।আগামী নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বারবার বলেছি—ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে, ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন হবে। সেটি হবে মহোৎসবের নির্বাচন, যদি আমরা ঐকমত্যের মাধ্যমে ফয়সালা করতে পারি। এই নির্বাচন শুধু নির্বাচন নয়, এটি হবে জাতির নবজন্ম।’
তিনি আরও বলেন, ‘জাতি সত্যিকার নবজন্ম হবে—এটা শুধু নির্বাচন না, এটা নবজন্ম। এই যে এত ত্যাগ, এত রক্ত—এগুলো সার্থক হবে যদি আমরা এই নবজন্মটা লাভ করতে পারি।তিনি সতর্ক করে দেন, বিভাজন বা দ্বিমতের কোনো স্থান নেই। ‘আমরা অনেক কথা বলতে পারি, কিন্তু দ্বিমত রেখে সমাপ্ত করতে পারব না। যখন ঐকমত্যে পৌঁছাবো, তখনই নির্বাচন সার্থক হবে।’
অধ্যাপক ইউনূস উদাহরণ টেনে বলেন, ‘আমাদের হাতে এখন আলাদিনের প্রদীপের মতো সুযোগ এসেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সেই শক্তি এনে দিয়েছে। আমরা চাইলে ছোটখাটো বিষয় চাইতে পারি, আবার চাইলে পুরো জাতিকে নতুনভাবে গড়তে পারি। এই সুযোগ একবারই এসেছে, আর আসবে না।রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘এত বড় কাজ আর কোনোদিন পাওয়া যাবে না। তাই ধৈর্য ধরে আমাদের এগোতে হবে। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত আমাদের কাজ হলো—কোনো দ্বন্দ্ব ছাড়াই মহোৎসবের পরিবেশ সৃষ্টি করা।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হাইওয়ে বানিয়ে ফেলেছি, এখন শুধু সাইনবোর্ড বসানো বাকি। পথ ঠিক আছে, গন্তব্য পরিষ্কার। এই নির্বাচন হবে উৎসবের নির্বাচন, দেশের শান্তি ও নতুন যাত্রার সূচনা।তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমাদের সংস্কারের মূল লক্ষ্য হলো সব পথঘাট বন্ধ করা—যাতে কোনো স্বৈরাচার আর ফিরে আসতে না পারে। এজন্য সবাইকে একমত হতে হবে।’
কমিশনের কাজকে প্রধান উপদেষ্টা অভূতপূর্ব অর্জন বলে অভিহিত করেন। কমিশনের সদস্য ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পরিশ্রমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আপনারা ইতিহাসের এক স্মরণীয় অধ্যায় রচনা করেছেন। এখন শুধু এটিকে নিখুঁতভাবে সমাপ্ত করা দরকার। এর মধ্য দিয়েই নতুন জাতির জন্ম ঘটবে।তিনি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, ‘এবার আমাদের ব্যর্থ হবার কোনো সুযোগ নেই। ঐকমত্যের এই পথেই আমরা এগোবো, নির্বাচন সফল করব এবং জাতি হিসেবে মহাউৎসবের যাত্রা শুরু করব।’
এসময় আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রিয়াজ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (ঐকমত্য গঠন) মনির হায়দার।