
বিতর্কের পর বদলে গেল জাকসু ভোটের হিসাব নিকাশ। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভিপিসহ ৩টি পদে জয় পেয়েছে। জাকসুর ২৫ পদেই নির্বাচিত হতে পারেনি ছাত্রদল প্রার্থীরা। অন্যদিকে শিবির পেয়েছে ২১টি পদ। এছাড়াও বাগছাস পেয়েছে ১টি পদ
বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার : অবশেষে নানা বিতর্কের পর বদলে গেল জাকসু ভোটের হিসাব নিকাশ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জাকসু) ২৫টির মধ্যে কোনো পদেই নির্বাচিত হতে পারেনি ছাত্রদলের প্রার্থীরা। অন্যদিকে শিবির পেয়েছে ২১টি পদ। এছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভিপিসহ ৩টি পদে জয় পেয়েছে। আর বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) পেয়েছে ১টি পদ। অবশ্য গত বৃহস্পতিবার ভোটগ্রহণ চলাকালীন সময়েই অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল। এরপরপর বাম সংগঠনগুলোও একই অভিযোগে ভোট বর্জন করে।
ভোটগ্রহণের প্রায় ৪০ ঘণ্টা পর শনিবার সন্ধ্যায় জাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের ফল প্রকাশ করা হয়। এতে ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রশিদ জিতু। আর সাধারণ সম্পাদক হন শিবিরের মাজহারুল ইসলাম।এতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন মহিবুল্লাহ শেখ জিসান আহমেদ ও ক্রীড়া সম্পাদক হয়েছেন মাহমুদুল হাসান কিরণ। এছাড়া সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বাগছাসের আহসান হাবিব।
এছাড়া জাকসুর বাকি সবগুলো পদেই শিবির-সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। এরা হলেন, এজিএস আয়েশা সিদ্দিকা মেঘলা ও ফেরদৌস আল হাসান, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফার্মেসি বিভাগের আবু উবায়দা উসামা, পরিবেশ ও প্রকৃতি সংরক্ষণ সম্পাদক পদে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী সাফায়েত মীর, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ইংরেজি বিভাগের জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের রায়হান উদ্দিন, নাট্য সম্পাদক হিসেবে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের রুহুল ইসলাম, সহ-ক্রীড়া (ছাত্র) পদে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের মাহাদী হাসান এবং সহ-ক্রীড়া (ছাত্রী) পদে গণিত বিভাগের ফারহানা লুবনা নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে, আইটি ও গ্রন্থাগার পদে ফার্মেসি বিভাগের ৪৮তম ব্যাচের রাশেদুল ইমন লিখন, সহ-সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন পদে মাইক্রোবায়োলজি (ছাত্র) তৌহিদ ইসলাম, সহ-সমাজসেবা ও মানবসেবা উন্নয়ন (ছাত্রী) পদে ফার্মেসি বিভাগের নিগার সুলতানা, স্বাস্থ্য ও খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের হুসনী মোবারক এবং পরিবহন ও যোগাযোগ সম্পাদক পদে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের তানভীর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন।এছাড়াও কার্যকরী সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফাবলিহা জাহান, নাবিলা বিনতে হারুন, নুসরাত জাহান ইমা, হাফেজ তরিকুল ইসলাম, আবু তালহা এবং মোহাম্মদ আলী চিশতী।
এর আগে দুপুর আড়াইটায় ২১টি হলের সবগুলোর ভোট গণনা শেষ হয়। বিকেলে শুরু হয় ফল ঘোষণা। শুরুতে হল সংসদে জয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়।গত বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় জাকসু নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। চলে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ওই দিন রাত সোয়া ১০টায় শুরু হয় গণনা। আর আজ শনিবার বেলা আড়াইটার পরে শেষ হয় ভোট গণনা। প্রায় ৪০ ঘণ্টা সময় লাগল ভোট গণনায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট হলে ভোট গণনা করা হয়।
৩৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে আংশিক ও পূর্ণাঙ্গ মিলে মোট সাতটি প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তবে ভোটের দিন অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদল-সমর্থিত প্যানেল, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের সম্প্রীতির ঐক্য, স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মেলন এবং ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের সংশপ্তক পরিষদ।
এ ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেয় ছাত্রশিবির-সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ-সমর্থিত শিক্ষার্থী ঐক্য ফোরাম এবং স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ। অনেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবেও নির্বাচনে অংশ নেন। সহসভাপতি (ভিপি) পদে প্রার্থী ছিলেন ৯ জন। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ৮ জন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (নারী) পদে ৬ জন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক (পুরুষ) পদে ১০ জন প্রার্থীতা করেন। কেন্দ্রীয় সংসদে মোট ২৫টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৭৭ জন।
২১টি হল সংসদের প্রত্যেকটির পদসংখ্যা ১৫। মোট পদ ৩১৫টি। এতে ৪৪৭ জন প্রার্থী ছিলেন। ছাত্রীদের ১০টি আবাসিক হলে ১৫০টি পদের মধ্যে ৫৯টিতে কোনো প্রার্থী ছিল না এবং একজন করে প্রার্থী ছিল ৬৭টি পদে। সে হিসেবে মাত্র ২৪টি পদে ভোট হয়।ছাত্রদল ও কয়েকটি বাম সংগঠনের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন বিএনপিপন্থি শিক্ষকও জাকসু ভোট বর্জন করেছেন। নির্বাচনে অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের অভিযোগ তুলে পদত্যাগ করেছেন নির্বাচন কমিশনের দুইজন সদস্যও।
জামায়াতের কোম্পানি ব্যালট পেপার ছেপেছে : ছাত্রদল
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর কোম্পানি থেকে ব্যালট ও ওএমআর মেশিন কিনেছে প্রশাসন। ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যালট পেপারেই এখন ভোট হচ্ছে। তিনি এতে কারচুপির আশঙ্কা করছেন।বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মওলানা ভাসানী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী এ অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, ভোটগ্রহণের আগের রাতে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে জাকসু নির্বাচনের জন্য জামায়াতে ইসলামের কোনো এক অখ্যাত কোম্পানি থেকে ব্যালট ও ওএমআর মেশিন কিনেছে প্রশাসন। ছাত্র শিবিরের প্যানেলকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে ভোটগণনায় কারচুপি করতে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চাপের মুখে তাৎক্ষণিকভাবে নির্বাচন কমিশন ওএমআর মেশিনে ভোট গণনা সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে।‘এরপর ম্যানুয়ালি ভোটগণনার সিদ্ধান্ত জানানো হয়। কিন্তু একই কোম্পানির ব্যালট পেপার দিয়ে আজকের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিবিরকে জয়ী করার জন্য এ নীল নকশা করা হয়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনকে নতুন ব্যালট পেপারে নির্বাচনের দাবি জানাই। এরকম পক্ষপাতমূলক নির্বাচনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি আমরা’- বলেন শেখ সাদী।